সকল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায় উদ্যোগ ও উদ্যোক্তার অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ভিত্তি হচ্ছে উদ্যোক্তাদের সক্রিয় ভূমিকা। দেশে প্রাপ্ত সকল সম্পদ ও মানবসম্পদকে ব্যবহার করে এবং নিজেদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে তারা অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ব্যবসায় উদ্যোগ ও উদ্যোক্তার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এ অধ্যায়ে আমরা ব্যবসায় উদ্যোগের বিভিন্ন দিক, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যবসায় উদ্যোগের গুরুত্ব, সফল উদ্যোক্তার গুণাবলি ও উদ্যোগ উন্নয়ন পথে বাধা দূরীকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব।
এ অধ্যায় শেষে আমরা:
আত্মবিশ্বাস
উদ্ভাবনী ক্ষমতা
পুঁজি সংগ্রহের দক্ষতা
ঝুঁকি এড়ানোর মানসিকতা
তোমাদের বিদ্যালয়ে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস প্রতিবছর কোনো না কোনো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্যাপন করা হয়। এবারের বিজয় দিবস আগত। তোমাদের মধ্য থেকে একজন প্রস্তাব দিল যে, এবার বিজয় দিবসে একটি নাটক মঞ্চস্থ করা যেতে পারে। সে আরও বলল, নাটক আয়োজনে সবরকম সহযোগিতা সে করবে। নাটক আয়োজন একটি কষ্টসাধ্য ও সৃজনশীল কাজ। এ ক্ষেত্রে নাটক নির্বাচন, অভিনেতা ও অভিনেত্রী নির্বাচন, স্থান ও সময় নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। এই যে তোমাদের ভিতর থেকে একজন শিক্ষার্থী নাটক আয়োজনে এগিয়ে এলো, এটি এক ধরনের উদ্যোগ। সাধারণ অর্থে যে কোনো কাজের কর্মপ্রচেষ্টাই উদ্যোগ। অতএব উদ্যোগ যে কোনো বিষয়েই হতে পারে।
আরও একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। কোনো সহৃদয় ব্যক্তি এলাকার ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করতে এগিয়ে আসেন। তিনি নিজের সঞ্চিত অর্থ ও অন্যদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। এটি তার দৃঢ় মনোবল ও উদ্যোগ গ্রহণের ফসল। এভাবে সকল প্রকার জনহিতকর কাজ যেমন, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ও খেলাধুলার ক্লাব প্রতিষ্ঠা করাও উদ্যোগের ফসল।
যে কোনো ব্যবসায়ও কোনো একজন ব্যক্তি বা কয়েকজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। একটি ব্যবসায় স্থাপনের ধারণা চিহ্নিতকরণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়টি স্থাপন ও সফলভাবে পরিচালনাই ব্যাবসায় উদ্যোগ। বিশদভাবে বলতে গেলে, ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে বোঝায় লাভবান হওয়ার আশায় লোকসানের সম্ভাবনা জেনেও ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়া ও সফলভাবে ব্যবসায় পরিচালনা কর
আমিনুলের কাহিনী
|
জনাব আমিনুল ইসলাম তার ইচ্ছা পূরণের জন্য ঝুঁকি নিয়েছেন এবং দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিশ্রম করেছেন । এই কর্ম প্রচেষ্টাই তার ব্যবসায় উদ্যোগ। যে ব্যক্তি দৃঢ় মনোবল ও সাহসিকতার সাথে ফলাফল অনিশ্চিত জেনেও ব্যবসায়স্থাপন করেন ও সফলভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করেন, তিনি ব্যবসায় উদ্যোক্তা বা শিল্পোদ্যোক্তা। ব্যবসায় উদ্যোগ (Entrepreneurship) এবং ব্যবসায় উদ্যোক্তা (Entrepreneur) শব্দ দুটি একটি অন্যটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যিনি ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনিই ব্যবসায় উদ্যোক্তা। আমেরিকার ফোর্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড, জাপানের ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাটসুসিটা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা কনোকে ম্যাটসুসিটা পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পোদ্যোক্তা ছিলেন। বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পোদ্যোক্তা হলেন জহুরুল ইসলাম, রণদা প্রসাদ সাহা, জনাব আলী, স্যামসন এইচ চৌধুরী প্রমুখ। বস্তুত সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকই উদ্যোক্তা। দেশ-বিদেশের সকল ব্যবসায় উদ্যোক্তার জীবনী পাঠ করে দেখা যায় যে, তাদের অনেকেই প্রথম জীবনে ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। দৃঢ় মনোবল, কঠোর অধ্যবসায় ও কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তারা বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন।
উদ্যোগ যে কোনো বিষয়ের ব্যাপারেই হতে পারে কিন্তু লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করাই হলো ব্যবসায় উদ্যোগ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মনে কর তুমি বাঁশ ও বেত দিয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস তৈরি করতে পার। এখন নতুন এক ধরনের বেতের চেয়ার দেখে সেটা বানানোর চেষ্টা করলে। এটি তোমার উদ্যোগ। এখন তুমি যদি অর্থ সংগ্রহ করে বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরির দোকান স্থাপন করে সফলভাবে ব্যবসায় পরিচালনা কর, তখন এটি হবে ব্যবসায় উদ্যোগ। ব্যবসায় উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন কিন্তু অন্যান্য উদ্যোগের উদ্দেশ্য জনকল্যাণ ।
ব্যবসায় উদ্যোগের ধারণা বিশ্লেষণ করলে যে সকল বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলি লক্ষ করা যায় তা হলো :
১। এটি ব্যবসায় স্থাপনের কর্ম উদ্যোগ। ব্যবসায় স্থাপন সংক্রান্ত সকল কর্মকাণ্ড সফলভাবে পরিচালনা করতে ব্যবসায় উদ্যোগ সহায়তা করে।
২। ঝুঁকি আছে জেনেও লাভের আশায় ব্যবসায় পরিচালনা। ব্যবসায় উদ্যোগ সঠিকভাবে ঝুঁকি পরিমাপ করতে এবং পরিমিত ঝুঁকি নিতে সহায়তা করে ।
৩। ব্যবসায় উদ্যোগের ফলাফল হলো একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। এর মানে হলো ব্যবসায় উদ্যোগ সম্পর্কে ধারণা কোনো চিন্তা-ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করে ৷
৪। ব্যবসায় উদ্যোগের অন্য একটি ফলাফল হলো একটি পণ্য বা সেবা ।
৫। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি সফলভাবে পরিচালনা করা।
৬। নিজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা নিজের উপার্জনের ব্যবস্থা করতে পারেন।
৭। অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ব্যবসায় উদ্যোগ মালিকের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেন।
৮। নতুন সম্পদ সৃষ্টি করা। ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে যেমন মানবসম্পদ উন্নয়ন হয় তেমনি মূলধনও গঠন হয়।
৯। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা। ব্যবসায় উদ্যোগ দেশের আয় বৃদ্ধি ও বেকার সমস্যার সমাধানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারে।
১০। মুনাফার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা গ্রহণ করা। ব্যবসায় উদ্যোগ উদ্যোক্তাদের সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে অণুপ্রাণিত করে।
ব্যবসায় উদ্যোগের বৈশিষ্ট্য আলোচনা থেকে উদ্যোক্তার গুণাবলি সম্পর্কে বেশ ধারণা লাভ করা যায়। অনেকে মনে করেন উদ্যোক্তাগণ জন্মগতভাবেই উদ্যোক্তা। অর্থাৎ জন্মসূত্রেই তিনি বহু ব্যক্তিগত গুণের অধিকারী হন যা তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করতে সহায়তা করে। বর্তমান সময়ে অবশ্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা যায়। একজন উদ্যোক্তার প্রধান প্রধান গুণসমূহ হলো-
|
সফল উদ্যোক্তাগণ দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধাগুলো চিহ্নিত করে তা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে সক্ষম। শিল্প উন্নয়নের জন্য সরকার প্রদত্ত সুযোগের ব্যবহারে তারা দক্ষতার পরিচয় দেন। তারা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সীমিত সম্পদের মধ্যে পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সফল উদ্যোক্তাগণ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে বাধাগুলো আগে থেকে অনুমান করেন এবং সেগুলো মোকাবেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপখাইয়ে চলা এবং অন্যের উপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা সফল উদ্যোক্তার বিশেষ গুণ বলে বিবেচিত হয়। তারা ব্যবসায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি বিচক্ষণতার সাথে নিরূপণ করেন এবং তা এড়ানো বা কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পরিমিত পরিমাণ ঝুঁকি গ্রহণ সফল উদ্যোক্তার একটি বড় বৈশিষ্ট্য। প্রয়োজনবোধে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলা এবং লক্ষ্য অর্জনে সমন্বয় সাধন উদ্যোক্তার বড় আরেকটি গুণ।
ব্যবসায় থেকে প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জনের অনিশ্চয়তাকেই ব্যবসায়ের ঝুঁকি হিসেবে গণ্য করা হয়। একজন সফল উদ্যোক্তা পূর্বেই ঝুঁকির সম্ভাব্য কারণ ও মাত্রা অনুমান করেন এবং সেগুলো মোকাবেলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। সফল উদ্যোক্তা গতিশীল নেতৃত্ব দানের অধিকারী হয়ে থাকেন। সফল উদ্যোক্তা পুঁজি সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থসংস্থান ও তার যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের বস্তুগত ও জনসম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করতে দক্ষতার পরিচয় দেন। ব্যবস্থাপনার কৌশল সম্পর্কে সফল উদ্যোক্তা গভীর জ্ঞান রাখেন। প্রচলিত প্রযুক্তির সাথে নতুন প্রযুক্তির সমন্বয় সাধন করা সম্পর্কে সফল উদ্যোক্তার ধারণা সময়োপযোগী। উদ্ভাবনী শক্তির বলে তারা উৎপাদন প্রক্রিয়ার নতুন উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ এবং তা ব্যবহার করেন । তারা শিল্প উদ্যোগের নব নব দিগন্ত উন্মোচন করেন।
উদ্যোক্তা চ্যালেঞ্জমূলক কাজ করতে বিশেষ আনন্দ পান। ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে নিরলস শ্রম দেন এবং ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাস পরিহার করেন। তিনি নিজের ক্ষমতা ও সিদ্ধান্তের প্রতি এত আস্থাশীল যে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিরাম কাজ করেন এবং ফলাফল অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কাজে নিয়োজিত থাকেন। কোনো কারণে প্রথম বার ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ খুঁজে দ্বিতীয় বার নতুন উদ্দ্যোমে কাজ শুরু করেন। কাজে সাফল্য অর্জনে তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাদের চরিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। প্রকৃত উদ্যোক্তারা নিজেদের ভুল অকপটে স্বীকার করেন এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। নিজের অভিজ্ঞতা ও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং নিজের কর্মক্ষেত্রে সেই শিক্ষার প্রয়োগ উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ। সফল উদ্যোক্তা তাদের কাজের সাফল্যে পরিতৃপ্তি ও অসীম আনন্দ পান।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়শীল দেশ। ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১০' অনুযায়ী আমাদের মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৫০ ভাগ আসে সেবা খাত থেকে, প্রায় ২০ ভাগ আসে কৃষি খাত থেকে আর বাকি ৩০ ভাগ আসে শিল্প খাত থেকে। যে কোনো দেশের উন্নয়নে শিল্পখাত মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে শিল্পখাতসহ সকল খাতেরই উন্নয়ন সম্ভব। ব্যবসায় উদ্যোগ নিম্নোক্তভাবে আমাদের দেশের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে—
সম্পদের সঠিক ব্যবহার
ব্যবসায় উদ্যোগ আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে। তাছাড়া নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।
জাতীয় উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধি
ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়। ফলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়।
নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি
সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমেও দেশে শিল্প কারখানা স্থাপন, পরিচালনা ও সম্প্রসারণ হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে নিত্যনতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় যা বেকার সমস্যা দূর করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে ।
দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। আমাদের এই বিশাল জনসংখ্যাই আমাদের সম্পদ হতে পারে। কারণ ব্যবসায় উদ্যোক্তা দেশের অদক্ষ জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করতে পারে।
পরনির্ভরশীলতা দূরীকরণ
ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা আমাদের পরনির্ভরশীলতা অনেকাংশে হ্রাস করতে পারি। ব্যবসায় উদ্যোগের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা একদিন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারব।
আমরা যদি উন্নত বিশ্বের দিকে লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাই যে, তাদের অগ্রগতির একটি প্রধান কারণ হলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা ও সম্প্রসারণের অনুকূল পরিবেশ। আমাদের দেশে মেধা, মনন ও দক্ষতার খুব বেশি ঘাটতি নেই। শুধুমাত্র অনুকূল পরিবেশের অভাবে আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসায় উদ্যোগ গড়ে উঠার জন্য নিম্নোক্ত অনুকূল পরিবেশ থাকা উচিত—
ঢাকার রাপা প্লাজার ইশতা ফ্যাশন হাউজ-এর মালিক ইশতা আক্তার একজন সফল উদ্যোক্তা। এ ব্যবসায় থেকে তার যা আয় হয় তা থেকে তিনি তার পরিবারকে সহায়তা করেন এবং পরিবারের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করেন। মূলত শখের বশে ব্যবসায় শুরু করলেও এখন এ ব্যবসায় থেকে তিনি ভালোই উপার্জন করেন।
কিন্তু মোবাইল ফোনের অনেক চাহিদা এবং লাভের সম্ভাবনা দেখে ভাবলেন যে ব্যবসায় শুরু করলে আরও অধিক লাভ করা সম্ভব। তার পরিবারের সদস্যরা তাকে সতর্ক করলেন যে এ বিষয়ে তার যেহেতু কোনো জ্ঞান নেই, তাই এ ব্যবসায় বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু তিনি কারো কথা না শুনে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেন। এর সাথে নিজের বর্তমান ব্যবসায় থেকেও টাকা নিয়ে স্বল্পমূল্যে বিদেশ থেকে মোবাইল সেট আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ের প্রতিযোগীরা আরও কমদামে মোবাইল সেট আমদানি করল। তাতে তার অধিক পরিমাণ লোকসান হলো। তার এ ব্যর্থতার প্রধান কারণ হলো তিনি ঝুঁকির পরিমাণ বিবেচনা না করেই ব্যবসায় শুরু করেছেন।
ব্যবসায় উদ্যোগের সাথে ঝুঁকির সম্পর্ক সর্বদা বিদ্যমান। কোনো ব্যবসায়ে ঝুঁকি কম, আবার কোনো ব্যবসায়ে ঝুঁকি বেশি। যে ব্যবসায়ে ঝুঁকি বেশি তাতে লাভের সম্ভাবনাও বেশি। আবার যে ব্যবসায় ঝুঁকি কম তাতে লাভের সম্ভাবনাও কম। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, মুদি দোকানে ঝুঁকি কম তাই মুনাফাও সীমিত। অন্যদিকে উপরে আলোচিত কেস স্টাডির মতো ব্যবসায়ে যেমন অনেক লাভের সম্ভাবনা আছে তেমনি অত্যধিক ঝুঁকিও আছে ।
ব্যবসায়ে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। যে কোনো সময় পণ্য অথবা সেবার চাহিদা কমে যেতে পারে। এর ফলে অর্জিত মুনাফা কমে যেতে পারে। এই সম্ভাবনাই ব্যবসায়িক ঝুঁকি। অন্যদিকে দেখা গেল ব্যবসায় থেকে বছরে উদ্যোক্তা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা আশা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়ে কম মুনাফা অর্জিত হয়েছে। এটিই হলো আর্থিক ঝুঁকি।
ব্যবসায় স্থাপন ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। অন্যদিকে ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে সাফল্যজনকভাবে লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে অধিক পরিমাণ আয় করাও সম্ভব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, একজন সফল উদ্যোক্তা সর্বদা ঝুঁকি আগেই নিরূপণ করেন এবং তা হ্রাসের ব্যবস্থা নেন এবং সবসময়ই পরিমিত পরিমাণ ঝুঁকি গ্রহণ করেন। মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকি এবং অতি আত্মবিশ্বাস যে কোনো পরিকল্পনাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করতে পারে ।
বাংলাদেশে ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নে বিরাজমান পরিবেশ সকল ক্ষেত্রে অনুকূল নয়। বেশ কিছু বাধার কারণে এখনো উদ্যোগ উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। নিম্নে বাংলাদেশে ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নে বাধাগুলো বিশ্লেষণ করা হলো-
বাংলাদেশের ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নে বিরাজমান বাধাসমূহ দূরীকরণে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে-
উপরোক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে পারলে দেশের ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হবে
বলে আশা করা যায়।
আরও দেখুন...